সোমবার, ২৭ এপ্রিল, ২০১৫

ভুমিকম্পে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে রংপুর, ময়মনসিংহ, সিলেটসহ বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় এলাকায়





বাংলাদেশের দিকে এগোচ্ছে ভূমিকম্প


নেপালের পোখারার লামজুং ও কোদানির পর এবার সিকিম, ভুটান, আসাম, নাগাল্যান্ড ও সিলেট হচ্ছে ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল। এই লাইনের (অ্যালাইনমেন্ট) যে কোনো স্থান ভূমিকম্পের কেন্দ্রবিন্দু হলে বাংলাদেশেও নেপালের মতো ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারে। ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে রংপুর, ময়মনসিংহ, সিলেটসহ বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় এলাকায়। মাটির মান খারাপ ও অপরিকল্পিত নগরায়নের কারণে ঢাকা হতে পারে এর প্রধান শিকার। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হতে পারে পুরো রাজধানী।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত একটি গবেষক দল এমনটাই ধারণা করছে। গত শনিবার নেপালের লামজুং ও গতকাল কোদায় একের পর এক যে সিরিজ ভূমিকম্প সংঘটিত হলো, গবেষকদের প্রতিবেদনে এ বিষয়েরও উল্লেখ রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়েও ভারতীয় টেকটোনিক প্লেটের অ্যালাইনমেন্টেই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল সৃষ্টি হচ্ছে। ওই গবেষকদের ধারণা, টেকটোনিক প্লেটের অ্যালাইনমেন্টেই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল তৈরি হবে। একই সঙ্গে মধ্য এশীয় টেকটোনিক প্লেটও এই প্লেটের সঙ্গে মিশেছে সিকিম থেকে নাগাল্যান্ড পয়েন্টে। এ সংযোগস্থলে ভারতীয় প্লেটটি মধ্য এশীয় প্লেটের নিচ দিয়ে চলে গেছে। ফলে ওই অংশটি আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।


উল্লেখ্য, টেকটোনিক প্লেট বলতে বোঝায় ভূত্বকের বিশাল খণ্ড, যা সঞ্চারণশীল এবং স্থান পরিবর্তন করে। প্লেটের এ ধরনের স্থান পরিবর্তনের ফলেই ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়। এ কারণেই গবেষকরা সংযোগস্থলের অংশটিকে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে মনে করছেন। গবেষক দলের প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রজার বিলহাম। তাদের তৈরি প্রতিবেদনের বাংলায় শিরোনাম দাঁড়ায়, 'ভারত ও হিমালয়ে ভূমিকম্প :টেকটোনিক প্লেটের ভূতাত্তি্বক অবস্থা ও ইতিহাস'

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ববিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ সৈয়দ আক্তার হুমায়ুন বলেন, শনিবার নেপালে রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্প হলেও বাংলাদেশে ৩ থেকে ৫ মাত্রায় অনুভূত হয়েছে। ওই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল আসাম হলে ঢাকায় ৭ মাত্রায় অনুভূত হতে পারত। ঢাকায় ৭ মাত্রায় ভূমিকম্প হলে ধ্বংস যে অনিবার্য, এটা নিয়ে তো কোনো সন্দেহ নেই।
গবেষকদের প্রতিবেদনে বলা হয়, ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল পর্যায়ক্রমে পূর্ব দিকে অগ্রসর হতে পারে। গতকাল নেপালে যে ৬ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে, সেটার উৎপত্তিস্থল কাঠমান্ডুর পূর্বে কোদানিতে। ঢাকা থেকে কোদানির দূরত্ব ৬১২ কিলোমিটার। প্রতিবেদনের সঙ্গে এটিরও সাযুজ্য লক্ষণীয়। আর থেমে থেমে ভূমিকম্প বড় ধরনের ভূমিকম্পের পূর্বাভাস।
বাংলাদেশ ভূতাত্তি্বক জরিপ অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক ও ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ এটিএম আসাদুজ্জামান বলেন, ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ও ভূমিকম্প সংঘটনের এলাকা হিসেবে রজার বিলহামের গবেষণা বাংলাদেশের ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞদের কাছেও সর্বাধিক বিশ্বাসযোগ্য ও যৌক্তিক। গত কয়েক দিনে নেপালে সংঘটিত সিরিজ ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলের সঙ্গে গবেষণার হুবহু মিল রয়েছে। ১৫০৫ সাল থেকে এ অ্যালাইনমেন্টেই ভারতীয় উপমহাদেশের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ও বেশি মাত্রার ভূমিকম্পের উৎসস্থল ছিল।
গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে, ভারতীয় ও মধ্য এশীয় টেকটোনিক প্লেটের সারিতেই বাংলাদেশের অবস্থান। ভারতের সিকিম, পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ি, ভুটান, আসাম, শিলং, বাংলাদেশের নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, সিলেট, ভারতের সিলচর, মণিপুর, নাগাল্যান্ড রয়েছে ভারতীয় প্লেট ও মধ্য এশিয়ার প্লেটের রেখায়।
গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, টেকটোনিক প্লেটের অবস্থানের কারণে পূর্বের দিকে সংঘটিত ভূমিকম্পের গভীরতা আরও কমে আসবে। এ প্রতিবেদনের সঙ্গেও সামঞ্জস্য পাওয়া গেছে গত দু'দিনের ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলের গভীরতার সঙ্গে। শনিবার লামজুংয়ে উৎপত্তি হওয়া ভূমিকম্পের গভীরতা ছিল ১৫ কিলোমিটার। রোববার কোদানিতে উৎপত্তি হওয়া ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের গভীরতা ছিল ১১ কিলোমিটার। পর্যায়ক্রমে পূর্বের দিকে অগ্রসর হলে গভীরতা আরও কমে আসতে পারে। এতে ধ্বংসলীলা আরও বড় হওয়ার আশঙ্কা। দুই প্লেটের অ্যালাইনমেন্টে কেন্দ্রস্থলের গভীরতা আরও কমতে পারে। সেই প্রভাব বাংলাদেশের জন্য আরও ভয়াবহ।
জাতীয় নগর উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপপরিচালক ও নগর পরিকল্পনাবিদ ড. কে জেড হোসেন তৌফিক বলেন, ১৮৫৭ সালে ভয়াবহ ভূমিকম্পের কারণে ব্রহ্মপুত্র নদের গতিপথ পরিবর্তন হয়ে গিয়েছিল। ওই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ওই লাইনেই ছিল। বর্তমানেও সেটা পূর্ব দিকে এগিয়ে আসছে বলে মনে হচ্ছে। তবে গভীরতা কমবে কি-না সেটা নিশ্চিত নয়। ওই লাইনকে ভূমিকম্পের ভবিষ্যৎ উৎসস্থল ধরে ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, বগুড়া, রংপুর, সৈয়দপুর, সিলেট, সুনামগঞ্জ শহর সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে আছে। কিন্তু ঢাকা শহরের মাটির মান খারাপ ও অপরিকল্পিত নগরায়নের কারণে ওই শহরগুলোর চেয়ে বেশি ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যে পড়তে পারে ঢাকা। যদিও ওই শহরগুলোর চেয়ে ঝুঁকির দ্বিতীয় পর্যায়ে আছে ঢাকা। তিনি জানান, ফল্টলাইন থেকে রক্ষার জন্য আপাতত ময়মনসিংহ শহরকে নিয়ে একটি পরিকল্পনা করা হয়েছে। সেটার কাজও শুরু হয়েছে।  !!সমকাল !!


Rabiul Islam Robi
B.S.S Hons. Political Science 
facebook.com/rabiul.robi.5891
Cell: 01682798330
 
Pls Join Us: কোনটে বাহে জাগো
www.facebook.com/kontebahejago

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন