সোমবার, ৪ মে, ২০১৫

রংপুরে বিড়ি কারখানাতে ২০ হাজার শিশু শ্রমিক

.......................................................................................................
রংপুর জেলার কাউনিয়া উপজেলাধীন তিস্তা নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা বিড়ি শিল্প নগরী হারাগাছ। এখানে বাতাসে ঝাঁঝালো গন্ধে দম বন্ধ হয়ে যায়। মাথার ওপর তামাক ডাটার বিষাক্তগুড়ো কুয়াশার মত উড়ছে। এখানে বিড়ি কারখানায় প্রতিদিন হাজার হাজার শিশু অমানবিক ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কাজ করছে। স্বল্পমূল্যে এখানে বিড়ি শ্রমিক পাওয়া যায়। তাই অধিক মুনাফার আশায় মালিকরা এ সব কারখানায় আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছে না। ফলে শিশু শ্রমিকদের দেহে বাসাবাঁধছে নানা রোগব্যাধি। অপুষ্টির শিকার এই মানব সন্তানেরা এভাবেই বেড়ে উঠছে। এদের দেখার কেউ নেই। এই শিশুদের জীবন বিপন্ন হয়ে উঠছে প্রতিদিন।



রংপুর শহর ছেড়ে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে ঘনবসতিপূর্ন কাউনিয়া থানার বিড়ি শিল্প এলাকা হারাগাছ। তিস্তা নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা এই বিড়ি কারখানাগুলো যারা কাজ করছে তাদের বেশির ভাগ নদী ভাঙ্গনের ফলে ছিন্নমূলে পরিনত হয়ে পড়া অভাবতাড়িত পরিবারের শিশু। গংগাচড়া, কাউনিয়া, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, ফুলছড়ি, সাঘাটা, উলিপুর, লালমনিরহাট সহ তিস্তা, ধরলা ও ব্রহ্মপুত্র নদ-নদীর ভাঙ্গনতাড়িত পরিবারের শিশু ও নর-নারীরা এখানে নিয়মিত শ্রমিক। এরা এখানে শ্রম বিনিয়োগ করতে এসে অনেকে বাসাবাড়ি করে স্থায়ী ভাবে বসবাস করছেন। এই বিড়ি শিল্পখাত থেকে সরকার প্রতি মাসে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আয় করছে। ওই রাজস্ব প্রাপ্তিতে যে আদম সন্তানেরা জীবন বিপন্ন করে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কাজ করছে তাদের জন্য সরকারের কোন ভাবনা নেই। প্রায় সাড়ে ছয় বছর হল হারাগাছ পৌরসভা হয়েছে,বিগত পৌর চেয়ারম্যান বিড়ি কারখানার মালিক আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি জানান, প্রায় ১২ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে হারাগাছ পৌর এলাকা বিসতৃত। আগে প্রায় ৪০টি বিড়ি কারখানা ছিল এখন আছে ২৮টি। যেমন-মায়া বিড়ি, আজিজ বিড়ি, সোনার চান্দ বিড়ি, মেনাজ বিড়ি, চান্দ তারা বিড়ি, নুরজাহান বিড়ি, গফুর বিড়ি, বেঙ্গল বিড়ি, দরদী বিড়ি, শহীদ বিড়ি, তৈয়ব বিড়ি, হালিম বিড়ি, রাজা বিড়ি, সূরুজ বিড়ি, লাঙ্গল বিড়ি, জলিল বিড়ি, কৃষাণ বিড়ি ইত্যাদি। তিনি নিজের কারখানায় যতটা সম্ভব স্বাস্থ্যকর পরিবেশ রাখার ব্যবস্থা  করেছেন, এছাড়া তার কারখানায় শিশু শ্রমিকরা  কাজ করে না বলে তিনি  জানান। সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে হারাগাছ বিড়ি শিল্প এলাকায় প্রতিদিন অমানবিক পরিবেশে কাজ করছে এমন শিশুর সংখ্যা ১৬থেকে ২০ হাজার হবে। ভাগ্যবিড়ম্বনার শিকার এসব শিশু বিনোদন, চিকিৎসা,পুষ্টি, শিক্ষাসহ সব মানবিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। স্বাস্য বিভাগের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, হারাগাছে বিড়ি শ্রমিক হিসেবে কর্মরত শিশুদের রক্তে নিকোটিনের মাত্রা অনেক বেশী। এখানকার শিশুরা শ্বাসকষ্ট, যক্ষা, হাঁপানী সহ নানাবিধ জটিল রোগে আক্রান- হচ্ছে, দেহে আয়েযাডিনের মাত্রা মারাত্মক কম। মায়েরা অপুষ্টি শিকার। ওই সব মা হাবাগোবা বুদ্ধি প্রতিবন্ধী শিশুর জন্ম দিচ্ছে। ক্রমাগত এ পরিসিতি হারাগাছের শিশু শ্রমিকদের জীবন বিপন্ন করে তুলছে। এলাকার সিংহ ভাগ মানুষ অভাবী ও অশিক্ষিত থাকায় শিশু সন-ানদের স্কুুলে পাঠানোর চেয়ে বিড়ি কারখানায় পাঠাতে বেশী আগ্রহী। তাতে পরিবারের আয় বাড়ে। একারণে এখানে অধিক বিয়ে করার প্রবনতা এবং অধিকজন্মহার ভয়াবহ পরিসিতি সৃষ্টি করেছে। এসব অধিক জন্মদাতা অভিভাবকদের বক্তব্য বেশী সন-ান হলে বিড়ি কারখানা থেকে বেশী আয় করে সংসারে যোগান দেবে। একই কারনে বাল্য বিয়ের হারও অনেক বেশি। পৌরসভার এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, এলাকার মোট জনসংখ্যার প্রায় ৭৫ ভাগ দিনমজুর। এদের ৮৫ ভাগ বিড়ি কারখানায় নিয়মিত শ্রমিক হিসেবে কাজ করে। বিড়ি কারখানায় কাজ করার ফলে তারা কমবেশি নানা রকম জটিল রোগে আক্রান-। এদের মধ্যে শিশু শ্রমিকদের অবসা ভয়াবহ। এদের নিয়মিত কোন শ্রমঘন্টা নেই।বাসা বাড়িতে বসেই অনেকে কাজ করেন। তাই সন্ধ্যায় এ সব শ্রমজীবি পরিবারগুলোর বাড়িতে লেখাপড়ার চেয়ে তামাক পাতার গুড়ো দিয়ে বিড়ি তৈরীর দৃশ্য চোখে পড়ে বেশি। কারখানার ভেতর তামাক ডাঁটার গুঁড়োয় এদের মুখ চোখ শরীর ধূসর হয়ে ওঠে। ঝাঁঁঝালো গন্ধে শ্বাসকষ্ট হয়। মাথার উপর তীব্র রোদ কোথাও টিনের ঘর থাকলেও তাতেও শ্বাসরুদ্ধকর অবসা। ঘরের জানালা নেই, পরিমিত আলো-বাতাসের ব্যবসা নেই। তবুও এই নরক যন্ত্রণার মধ্যে শিশু শ্রমিকরা বড়দের পাশাপাশি বিড়িতে মশলা (তামাক পাতা) দেয়। বিড়ি গোনে এক দুই তিন করে হাজার পর্যন-। হিসাব করে এক হাজার বিড়ি হতে আর কতটা বাকি। তা হলে মিলবে ১৩ টাকা ৫০ পয়সা। আবার এ টাকার অর্ধেক যাবে নিয়ন্ত্রণকারী মধ্যস্বত্বভোগী মহাজনের ঘরে। এখানে বেশকিছুদিন ওই সব ভাগ্য বিড়ম্বনার শিকার শিশু শ্রমিকদের উন্নয়নের জন্য আন-র্জাতিক শ্রম সংসার (আই ,এল,ও) আর্থিক সহায়তায় ৭টি এনজিও কাজ করেছে। কিন এ সব কাজের অগ্রগতি কি হয়েছে তা কারখানাগুলোতে শিশুশ্রমিকের উপসিতির অধিকহার দেখেই বোঝা যায়। এ ছাড়া ওই শ্রমজীবি অভিভাবকরা বেশী সাড়া দেয়নি এ সব এনজিওদের কাজের সাথে। তারা তাদের সন-ানদের বিড়ির কারখানায় পাঠাতেই বেশী উৎসাহী। তাদের ভাষায় পেটে ক্ষুধার আগুন রেখে সন-ানদের লেখাপড়া শিখে লাভ কি; তাই এদের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য প্রথম দরকার দারিদ্রবিমোচন

(UNB News)


Rabiul Islam Robi
B.S.S Hons. Political Science 
facebook.com/rabiul.robi.5891
Cell: 01682798330 
Pls Join Us: কোনটে বাহে জাগো
www.facebook.com/kontebahejago

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন