রবিবার, ৩ মে, ২০১৫

বদরগঞ্জে বাল্যবিবাহ , তিন ছাত্রীর মৃত্যু

.............................................................................................................................................................
রংপুরের বদরগঞ্জে এক বছরে বাল্যবিবাহের শিকার তিন স্কুলছাত্রীর অকালমৃত্যু হয়েছে। এভাবে অকালে মারা যাওয়ার পরও এলাকায় বাল্যবিবাহ থামছে না। গত বুধবারও দুই স্কুলছাত্রীকে বিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাল্যবিবাহের কুফল সম্পর্কে স্থানীয় লোকজনের ধারণা না থাকায় এ অপতৎপরতা বন্ধ করা যাচ্ছে না।
এলাকাবাসী ও বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের রংপুর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত এক বছরে বাল্যবিবাহের কারণে যে তিন স্কুলছাত্রের মৃত্যু হয়েছে, তারা হচ্ছে উপজেলার নাটারাম কান্দুপাড়া গ্রামের ভ্যানচালক জাহিদুল ইসলামের মেয়ে রুমানা খাতুন (১৩), উপজেলার রাধানগর পাঠানপাড়া গ্রামের কবির উদ্দিনের মেয়ে রোকসানা খাতুন (১৩) ও বদরগঞ্জ পৌর এলাকার বালুয়াভাটা গ্রামের হবিবর রহমানের মেয়ে ফাতেমা খাতুন ওরফে চুমকি (১৪)।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ১৫ এপ্রিল রুমানা খাতুন মারা যায়। তখন সে সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিল। বছর খানেক আগে স্থানীয় নাটারাম উচ্চবিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময় উপজেলার বৈরামপুর গ্রামের সৈয়দ আলীর ছেলে নাসিরুলের সঙ্গে তার বিয়ে দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের নিকাহ নিবন্ধক (কাজি) শাহাবুল ইসলাম বিয়েটি নিবন্ধন করেন বলে রুমানার বাবা নিশ্চিত করেছেন।



গ্রামের বাসিন্দা দুলালী বেগম বলেন, রুমানা পড়াশোনা করতে চেয়েছিল। ওর বিয়ে করার ইচ্ছা ছিল না। তার ওপর গর্ভধারণ করায় মেয়েটা খুব অসুস্থ হয়ে পড়ে। এলোমেলো আচরণও করত। কম বয়সে বিয়ে দেওয়াতেই মেয়েটা মারা গেল।
রুমানার বাবা জাহিদুল আক্ষেপ করে বলেন, কম বয়সোত বেটিটার বিয়াও দিয়া অসুখ নাগা আছিল। তার ওপর প্যাটোত বাচ্চা আসিয়া ছইলটাক অসুখ-বিসুখে জড়ায় মারা গেল। কম বয়সোত বিয়াও না দেলে ছইলটা মোর বাঁচি থাকিল হয়।

ব্র্যাক সূত্রে জানা গেছে, পাঠানেরহাট উচ্চবিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী রোকসানা খাতুনকেও তার অমতে জোর করে গত বছরের ২৪ এপ্রিল মণ্ডলপাড়া গ্রামের হাফিজুর রহমানের (২৪) সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয়। ওই দিন সন্ধ্যায় রোকসানা স্বামীর সামনেই কীটনাশক পানে আত্মহত্যা করে। এর পর থেকে হাফিজুরও বিষণ্নতায় ভুগছিলেন। অবশেষে গত শুক্রবার তিনিও কীটনাশক পানে আত্মহত্যা করেন।
বাল্যবিবাহের শিকার চাঁদকুঠিরডাঙ্গা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী ফাতেমা খাতুন গত বছরের ১ নভেম্বর সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যায়। সে বিয়ের সময় বদরগঞ্জ চাঁদকুঠিরডাঙ্গা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী ছিল। বিয়ের পর পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল তার।
রুমানা, রুকসানা ও ফাতেমার মৃত্যুর ঘটনা তাদের পরিবারের সদস্যদের কাঁদালেও পরিস্থিতি বদলায়নি। এখনো বাল্যবিবাহ চলছে। গত বুধবার গুদামপাড়া গ্রামের রজনীকান্ত দাসের মেয়ে লক্ষ্মী রানীকে (১০) গঙ্গাচড়া উপজেলার বেতগাড়ি গ্রামের সুকধন দাসের ছেলে নারায়ণ দাসের (১৭) সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয়। মেয়েটি গুদামপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী ছিল। একই রাতে বিয়ে হয় গুদামপাড়া গ্রামের বীরেন চন্দ্র দাসের মেয়ে আদুরী রানি দাসের (১৪)। বর একই গ্রামের বীরেন দাসের ছেলে কার্তিক দাস (১৮)। আদুরী অষ্টম শ্রেণিতে পড়ত। এ বিয়েটি নিবন্ধন করেছেন স্থানীয় নিকাহ্ নিবন্ধক তপন কুমার সাহা। যোগাযোগ করা হলে তিনি বাল্যবিবাহ নিবন্ধনের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ভাই, ভুল হয়ে গেছে।

উপজেলার চাঁদকুঠির ডাঙ্গাক্ষালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছালেমা খাতুন বলেন, গত এক বছরে তাঁর বিদ্যালয়ের ১৫টি মেয়ের বাল্যবিবাহ হয়েছে। ওই মেয়েগুলো এখন আর স্কুলে আসে না।
আফতাবগঞ্জ দাখিল মাদ্রাসার সুপার আবদুল আহাদ বলেন, গত এক বছরে তাঁর মাদ্রাসার ১৬টি মেয়ের বাল্যবিবাহ হয়েছে।
বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে ব্র্যাক বদরগঞ্জে একটি পাইলট প্রকল্প গ্রহণ করেছে। ব্র্যাকের কর্মীরা প্রায় এক বছর ধরে এ প্রকল্পের কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন।
ব্র্যাকের সামাজিক ক্ষমতায়ন কর্মসূচির জ্যেষ্ঠ জেলা ব্যবস্থাপক সাজ্জাদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, এক বছর আগে এ উপজেলায় প্রতি মাসে গড়ে ২৫টি বাল্যবিবাহ হতো। ব্র্যাক ও স্থানীয় প্রশাসনের যৌথ চেষ্টায় এলাকায় বাল্যবিবাহের প্রবণতা অনেক কমেছে। তিনি দাবি করেন, এখন প্রতি মাসে গড়ে পাঁচ-ছয়টি বাল্যবিবাহ হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ বলেন, বাল্যবিবাহ রোধে আমরা দিনরাত কাজ করছি। আগামী জুনের মধ্যে বদরগঞ্জকে বাল্যবিবাহমুক্ত ঘোষণা করা হবে।

সূত্রঃ প্রথম আলো

Rabiul Islam Robi
B.S.S Hons. Political Science 
facebook.com/rabiul.robi.5891
Cell: 01682798330 

Pls Join Us: কোনটে বাহে জাগো
www.facebook.com/kontebahejago

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন